মোঃ ছামিউল ইসলাম, জামালপুর: জামালপুরের সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম,দুর্নীতি,অর্থ আত্নসাৎ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দূর্ব্যবহার করার অভিযোগ এনে তার অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী করা হয়েছে।
১২ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১০ টায় সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বলিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন করেছে।
শান্তিপুর্ণ মানববন্ধন চলা কালে প্রধানশিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনের পক্ষাবলম্বন করে স্থানীয় সরিষাবাড়ী রেজিস্ট্রি অফিসের ভেন্ডার নিয়ামত আলী মানববন্ধন ভন্ডুল হামলার চেষ্টা এবং বিভিন্ন হুমকি প্রদান,উগ্রমনোভাব ও অসদাচরন করে।
সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে ওয়াজেদা পারভীনের বিভিন্ন অপকর্ম ও দুর্নীতির সঠিক তদন্ত করে প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড এর নিকট আইনগত ব্যবস্থার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন,২০১৬ সালে ১৬ জুলাই রুপালী ব্যাংক লিঃ আরামনগর বাজার শাখায় জামালপুর স্টেশন রোড ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাব(নং-৫৯২৬০১০০০০৩১৯) খোলেন ওয়াজেদা পারভীন। তারপর থেকেই ছাত্রীদের
কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের নিজ নামীয় ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাবে রশিদের মাধ্যমে ২০১৬
সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৩৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ১৮১ টাকা জমা ও উত্তোলন করেন।
ওয়াজেদা পারভীনের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাবে আদায় হওয়া অর্থ নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলে তিনি জানান।এ ছাড়াও সহকারী প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান সামাদ, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মতিউর রহমান,ট্রেড ইন্সট্রাক্টর হারুন অর রশীদ, সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান, আতাউল গনি ওসমানী,তাহমিনা আক্তারসহ মানববন্ধনে বক্তারা বক্তব্য দেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৫-২০১৬,২০১৬-২০১৭ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ১২ টাকা ০১ পয়সার দুর্নীতি অডিট কমিটির প্রতিবেদনের রিপোর্ট অনুযাযী বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ১০দিনের সময় দিয়ে পর্যালোচনাসহ ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য ২০২১ সালের ৭ মার্চ ১ম নোটিশ জারী করেন।
১৮ মার্চ ওয়াজেদা পারভীন পর্যালোচনাসহ সহ ব্যাখ্যার জবাব না দিয়ে লিখিত ভাবে আরও ১০দিন সময়ের জন্য আবেদন করলে সভাপতি সময় বৃদ্ধির আবেদনটি মঞ্জুর করে ৩০ মার্চ এর মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। ৯ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির সভায় ওয়াজেদা পারভীনের জবাব সন্তোষ জনক ও বিধি সম্মত না হওয়ায় ১০ এপ্রিল পর্যালোচনাসহ ব্যাখ্যা প্রতিবেদন তৈরীর সুবিধার্থে প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি এবং ১১ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান সামাদকে প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে নোটিশ জারী করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান।
বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়টি আলোচিত হওয়ায় কয়েকজন বিশেষ মহলের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়পরিচালনা পর্ষদ পরিচালনা কমিটির সভাপতির নিকট ওয়াজেদা পারভীন ক্ষমা প্রার্থনা করলে ওয়াজেদা পারভীন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যেন পুনরায় দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ব্যাপারে সভাপতির নিকট বিশেষ মহল অনুরোধ করে ও বিদ্যালয়ে পরিচালিত অভ্যন্তরীণ অডিট বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট বিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক টাকা পাওনা থাকলে সেটা বিদ্যালয়ের চলতি হিসাবে জমা দিতে হবে মর্মে উপস্থিত সকলেই মতামত ব্যক্ত করেন।
প্রধান শিক্ষককে আত্নসাতকৃত ৫৮ লক্ষ ১৪ হাজার ১২ টাকা ০১ পয়সা থেকে মাত্র এক কালীন ২ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও প্রতি মাসে বিদ্যালয়ের ফান্ডে ১০ হাজার টাকা করে ২৫ মাসে পরিশোধ করার শর্তে প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনকে স্বপদে বহালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৩০ মে জনতা ব্যাংক সরিষাবাড়ী শাখায় বিদ্যালয়ের চলতি (নং ১০২১০০১৫৮৬) হিসাবে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জমা দেন ওয়াজেদা পারভীন ।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের মিটিং টি ১৩ মে হলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে ৩০ মে।প্রকাশ থাকে যে,তিনি সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের সানাকৈর শেখ খলিলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।পরে সরিষাবাড়ী রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন রত অবস্থায় ৫৬ হাজার টাকা দুর্নীতি করেন। দুর্নীতির দায়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে অডিট কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী তার মাসিক বেতন থেকে আত্মসাৎকৃত টাকা পরিশোধ করেন। তারপর তিনি ২০১৫ সালের ১ জুন সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে আবারো পুর্বের মতো অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ, অভিভাবক ও শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনকে মুঠোফোনে কল দিলে মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কথা হলে সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান শাহজাদা বলেন, মানববন্ধনের বিষয়টি আমি অবগত নয়।
এ নিয়ে স্হানীয় সচেতন মহল ও শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।